ওমানের সালালাহ স্পোর্টস কমপ্লেক্সে গত শুক্রবার জুনিয়র এশিয়া কাপ হকিতে উজবেকিস্তানকে ৩-১ গোলে হরিয়েছে বাংলাদেশ।
জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে হোঁচট খায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তৃতীয় ম্যাচে গ্রুপের তলানিতে থাকা উজবেকিস্তানকে হারিয়ে জয়ে ফেরে মামুনুর রশীদের দল। আজ চতুর্থ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জয় পেলেই সেমিফাইনালের টিকেট পাবে বাংলাদেশ।
গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দল এই পর্যন্ত একটি ম্যাচেও জিততে না পারায় দলটির বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী ছিল বাংলাদেশ জুনিয়র হকি দল। প্রথম কোয়ার্টারের শেষ দিকেই তারা ম্যাচের লিড নেয়। পেনাল্টি কর্নার থেকে লক্ষ্যভেদ করে দলকে এগিয়ে নেন আমিরুল ইসলাম। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে পেনাল্টি কর্নার থেকেই দলের ও নিজের দ্বিতীয় গোল করেন এই তরুণ খেলোয়াড়। ২-০ গোলে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ দল আরো বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে তৃতীয় কোয়ার্টারের খেলা শুরু করে। কোয়ার্টারের শুরুতেই নিখুঁত হিটে ঠিকানা খুঁজে ব্যবধান আরো বাড়ান আবেদ। এরপর তারা রক্ষণাত্মক খেলা শুরু করে।
বাংলাদেশ রক্ষণভাগে মনোযোগ দেয়ায় আক্রমণের সুযোগ পায় উজবেকিস্তান। চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টারের ষষ্ঠ মিনিটে একটি গোল করে ব্যবধান কমান উজবেকিস্তানের ফোজিলবেক হোসানভের। এই জয়ের মধ্য দিয়ে তিন ম্যাচ খেলা বাংলাদেশ ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ টেবিলের তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। তিন ম্যাচে বাংলাদেশের সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে এবং গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে টেবিলের দুইয়ে অবস্থান করছে দক্ষিণ কোরিয়া। আর তিন ম্যাচে সবগুলোতেই জয় নিশ্চিত করে ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করে আছে মালয়েশিয়া। অন্যদিকে টেবিলের তলানিতে থাকা উজবেকিস্তান এখনো নামের পাশে কোনো পয়েন্ট যোগ করতে পারেনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হারা আগে তারা মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ৮-১ ব্যবধানে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ৬-১ ব্যবধানে হেরেছিল।
উজবেকিস্তানকে হারিয়ে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে তাসিন-মামুনুলরা। আজ তারা গ্রুপপর্বের চতুর্থ ও শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। এই ম্যাচে জিততে পারলেই তারা সেমিফাইনালে পা রাখবে। আর ম্যাচটিতে কোনোরকম ধাক্কা খেলেই লাল-সবুজের জার্সিধারীরা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাবে। ম্যাচটি দক্ষিণ কোরিয়ার গ্রুপ পর্বের চতুর্থ ম্যাচ। প্রথম দুই ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়ে তারা গতকাল মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ধাক্কা খায়। প্রথম দুই কোয়ার্টারে কোরিয়ানরা কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পারলেও পরের দুই কোয়ার্টারে তারা নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়। প্রথম দুই কোয়ার্টার মিলিয়ে মালয়েশিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার জালে ১টি গোল করে। তৃতীয় ও চতুর্থ কোয়ার্টারে তারা আরো দুটি গোল করে। শেষ দিকে অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকাও একটি গোল করতে পেরেছিল। তবে সেই গোল আর কাজে লাগেনি, শেষ পর্যন্ত তারা টুর্নামেন্টের প্রথম পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই মাঠ ছাড়ে।
গতকাল শীর্ষ দুইয়ে থাকা দলগুলোর ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ইরফান সুহাইমি। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে তাদের প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা দেখেই বোঝা যায় তারা কতটা শক্তিশালী। তাই আজ তাদের বিপক্ষে জয় নিশ্চিত করে সেমিফাইনালে পা রাখাটা বাংলাদেশের জন্য কষ্টসাধ্যই হবে। এর আগে স্বাগতিক ওমানকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচটা কোণঠাসা হয়েই হারতে হয়েছে মামুনুল রশিদের দলকে। ওমানকে হারিয়ে শুরু করায় আত্মবিশ্বাস ছিল তাদের। তাই লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের লক্ষ্য ছিল ভয়হীন খেলার। তবে তাসিন-জাহিদরা শক্তিশালী মালয়েশিয়ার বিপক্ষে নিজেদের সামর্থ্য তুলে ধরতে পারেনি। সালালাহ স্পোর্টস কমপ্লেক্সে সেদিন তারা ৫-১ গোলের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। মালয়েশিয়ার হয়ে সেদিন হ্যাটট্রিক গোল করেন ইরফান সুহাইমি। এর আগেও একবার ২০১৫ সালে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল ও মালয়েশিয়া অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল। সেবার বাংলাদেশ উড়ে গিয়েছিল ৮-০ গোলে। এবারের আসরেও বাংলাদেশ প্রতিশোধ নিতে ব্যর্থ হয়।
প্রথম কোয়ার্টারেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। শফিক ইখমালের ফিল্ড গোলের পর ইরফান ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পেনাল্টি কর্নার থেকে। এ কোয়ার্টারের শেষ দিকে পিসি থেকে ব্যবধান আরো বাড়ান সাইয়ামিম নাইম। তৃতীয় কোয়ার্টারে মেলে ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ। মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর ফিল্ড গোলে ব্যবধান কমায় বাংলাদেশ। কিন্তু এই কোয়ার্টারে শেষ দিকে ইরফানের গোলে ফের কোণঠাসা হয়ে পড়ে দল। চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টারে ইরফান হ্যাটট্রিক পূরণ করলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। উজবেকিস্তান, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে টানা তিন ম্যাচে অপরাজিত মালয়েশিয়া।